আল্লাহ আপনাকে সময় দিবেন কিনা কোনও গ্যারান্টি নেই |

কিছুদিন আগে পর্যন্ত ও আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া, জন্ম সূত্রে পাওয়া, নামে মুসলমান কিন্তু কাজ কর্মে মুসলমান না এমনি একজন মুসলমান ছিলাম | ৩১ বছর চলে গেছে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিক মত পড়িনি | প্রত্যেক মুসলমান কে অবশ্যই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে হবেই কিন্তু আমি কখনও পড়েছি কখনও আবার পড়িনি | আজকে থেকে পড়বো , কালকে থেকে পাঁচ ওয়াক্ত পড়বো এইভাবেই চলে গেছে ৩১ বছর কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযী হতে পারিনি | আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দাড়ি কাটতেই নিষেধ করেছেন | অথচ আমি মুসলমান মনে করেছি দাড়ি কি একটা Unsmart কাজ, দাড়ি রাখা তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু না | এই বয়সে মানুষ দাড়ি রাখে নাকি | একটু বয়স হোক বয়স কালে দাড়ি ঠিক আছে | এইভাবেই চলে গেছে ৩১ বছর দাড়ি রাখা হয়নি | আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) পুরুষদের পরনের পোশাক ঝুলিয়ে টাখনুর নিচে পরতে নিষেধ করেছেন কারন এটা হারাম | অথচ আমি মুসলমান মনে করেছি কি একটা Unsmart কাজ টাখনুর উপরে প্যান্ট ? শুধু নামাযে দাঁড়ানোর সময় প্যান্ট টাখনুর উপরে করে নিলেই হলো | হায়! হতভাগা মুসলমানের সন্তান ছিলাম আমি | বাবা মা ছোঁট বেলাই কোরআন শিক্ষা, নামায শিক্ষা দিয়ছেন ঠিকই কিন্তু আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া, জন্ম সূত্রে পাওয়া, নামে মুসলমান সন্তান কোনও কিছুই ঠিক মত পালনই করিনি | পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করিনি, দাড়ি রাখিনি, কোরআন পড়িনি ঠিক মতো, টাখনুর উপরে করে পোশাক পরিনি | এ তো গেলো চারটি আসল কাজ | আরও শত শত ভুল, হাজারো ভুল করেছি | হাজারো বার কুফরি করেছি | ৩১ বছর থেকে যদি ৭ বছর বাদ দেই তাহলে থাকে ২৪ বছর | এই গোটা ২৪ বছর চলে গছে অসংখ্য, অগনিত ছোট বড় গুনাহ আর কুফরির মধ্যে | কিন্তু বুক ফুলিয়ে সব সময় বলেছি আমি মুসলিম |

পরিবর্তনঃ

মহান আল্লাহ তাআলার অশেষ দয়া এবং মেহেরবানী যে আমাকে ৩১ বছর সুস্থ মানুষ হিসাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং ৩১ বছর পরে হলেও আমাকে হদায়েত দান করেছেন এবং আমাকে ভুল বোঝার তৌফীক দান করেছেন | এবং আমার সকল ভুলের জন্যে আমাকে তাওবা করার সুযোগ দিয়েছেন | হ্যাঁ আমি মহান আল্লাহ তাআলার নিকটে ফিরে এসেছি এবং আমি তওবা করেছি যে –

হে আল্লাহ, আমি আমার পূর্বের সকল প্রকার ভুলের জন্যে , সকল প্রকার গুনাহর জন্যে লজ্জিত | হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি | হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ক্ষমা করো | হে আল্লাহ, তুমি আমাকে সাহায্য করো, আমাকে আশ্রয় দান করো | হে আল্লাহ, আজকে থেকে আমি আমার সবকিছু তোমার দিকে ঘুরিয়ে দিলাম | হে আল্লাহ, আজকে থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোনদিন জ্ঞান থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত এক ওয়াক্ত নামায ক্বাযা করবো না, হারাম কে কখনওই আমার সংস্পর্শে আনাবো না | হে আল্লাহ, আমি আজকের থেকে কোনদিন দাড়ি কাটবো না, আমার পোশাক কখনওই ঝুলিয়ে টাখনুর নিচে পরবো না | হে আল্লাহ, আজকে থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি কোরআন এবং সুন্নাহ কে আঁকড়ে ধরলাম | আমি সবাইকে পরিবর্তন করতে পারব না কিন্তু আজকে থেকে আমি আমার ইস্ত্রি ও সন্তান নিয়ে আমি পরিবর্তিত হয়ে যাবো | হে আল্লাহ ,তুমি আমাকে উত্তম রিজিক দান করো | হে আল্লাহ, তুমি আমাকে কবুল করো | হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ক্ষমা করো | আমীন |

যেদিন থেকে তাওবা করেছি সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত মহান আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতে এক ওয়াক্ত নামায ক্বাযা হয়নি | আল্লাহ রহমতে দাড়ি রেখে দিয়েছি, এখন আর পোশাক ঝুলিয়ে টাখনুর নিচে পরিনা | যা হারাম তার কাছাকাছি ও আল্লাহর ইচ্ছাতে থাকি না | এখন যে কাজ গুলা আমার জীবনের রুটিন থেকে বাদ পড়ে গেছে সেগুলো হলোঃ আমি এখন টিভি দেখি না, সিনামা দেখি না, গান শুনি না, আধুনিক যুবকদের মতো কথায় কথায় গালি দেই না, পরনিন্দা/পরচর্চা করি না এমন আরও অনেক কিছু | সবই মহান আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা | এখন যে কাজ গুলা আমার জীবনের রুটিন এ যোগ হয়েছে সেগুলো হলোঃ বিনয়ের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা, বাংলা অর্থ সহকারে বুঝে কোরআন পড়াশোনা, হদীস নিয়ে পড়াশোনা, দৃষ্টি সংযত রাখা, প্রতিদিন প্রতি সময় মৃত্যু কে স্মরণ করা এবং মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত থাকা, কোনও ভুল হলে সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবা ইস্তেগফার করা এমন আরও অনেক কিছুর অভ্যাস করার চেষ্টা করে যাচ্ছি | এবং অবশ্যই আমার কাজ পেশা ঠিক রেখেই |
যেদিন থেকে মনে প্রাণে তওবা করেছি সেদিন থেকে মহান আল্লাহ তাআলা অনেক কিছুই উত্তম রূপে সহজ করে দিয়েছেন | এবং এখন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আগের থেকে অনেক… অনেক… অনেক … ভালো আছি | আগে তো বে-নামাযী বে-ইমান ছিলাম | এখন আমি আল্লাহর রহমতে ইমানদার এবং খাটি নির্ভেজাল মুসলমান | সব আল্লাহ ভালো জানেন | আল্লাহই সব কিছুর মালিক | তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা তাকে গোমরাহির মধ্যে ফেলে দেন | আমি শুধু চেষ্টা করে যাচ্ছি বাকি সব আল্লাহর ইচ্ছা |
সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো থাকবেন | আর সকল মুসলমান ভাই ও বোনদের কাছে অনুরোধ এখনো তওবা না করে থাকলে, আল্লাহর কাছে ফিরে না আসলে এক্ষণই তওবা করে ফেলুন ফিরে আসুন | আমরা প্রত্যেকেই ভুলের মধ্যে আছি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আছি | ১ মিনিট পরেই যে আপনি বেচে থাকবেন তাঁর কোনও গ্যারান্টি নাই | বিপদ কিভাবে আপনার উপরে আসবে | আল্লাহ তাআলা কিভাবে আপনাকে ধরে ফেলবেন এটা আপনার মাথায়ই আসবে না | আল্লাহ আপনাকে সময় দিবে কিনা কোনও গ্যারান্টি নাই | আল্লাহ না করুক যদি তওবা না করে বে-নামাযি অবস্থায় আপনি মারা জান তাহলে এর থেকে বড় ভয়ংকর বিপদ আর হবে না | আর যে বিপদ থেকে আপনাকে কোনও শক্তি উদ্ধার করতে পারবে না | আপনাকে মৃত্যু বরন করতেই হবে যার কোনো দিন ক্ষণ নেই |এটাই সত্য, আর তাঁর থেকে আরও বড় সত্য আপনার হাশর এর ময়দানে আল্লাহ তাআলার সামনে দাড়াতে হবে | আপনার বিচার হবে এবং আপনার জন্যে কঠিন আজাব জাহান্নাম অথবা জান্নাত এর ব্যাবস্থা করা হবে | আল্লাহ না করুক যদি তওবা না করে বে-নামাযি বে-ইমান অবস্থা মারা জান তাহলে কি যে বিপদ… কি যে বিপদ… কি যে বিপদ… ও মুসলমান ভাই ও বোনেরা দয়া করে… দয়া করে কোরআন এবং সুন্নাহ কে আঁকড়ে ধরেন | যদি বাচতে চান বাংলা অর্থ সহকারে, বুঝে কোরআন পড়েন | নাজাতের রাস্তা পেয়ে যাবেন | আপনি যদি কোরআন বিশ্বাস করেন, বুঝে কোরআন পড়েন তাহলে আপনি পরিবর্তন হতে ব্যাধ |
Kamrujaman Shohel,
Front End Engineer, Genesis Digital, California-USA.
CTO, Westilo Technology Limited.
Ex co-founder, ThemeBucket.
Photo credit: https://pixabay.com/photos/kaaba-house-of-allah-muslim-islamic-186622/
0 replies

Leave a Reply

Want to join the discussion?
Feel free to contribute!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *